মোঃ মারুফ হোসেন লিয়নঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ। আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে একটা । শ্রেণিকক্ষে ১০ম শ্রেণির শতাধিক ছাত্রছাত্রী অপেক্ষা করছে পরের ক্লাসের জন্য। এর মধ্যেই পুলিশের পোশাকে অধ্যক্ষের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ঢুকলেন এক ব্যক্তি। ছাত্র-ছাত্রীরা তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ফিসফিস করে বলছে, ‘‘হ্যাঁ রে, ক্লাসে আজ পুলিশ কেন? চাপা গলায় কারও প্রতিক্রিয়া, ‘‘লোকটা কেমন গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে দ্যাখ!’’ গুঞ্জন থামালেন অধ্যক্ষ, ‘‘শোন, এই ভদ্রলোক আমাদের সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তোমাদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে কথা বলতে আজ আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসেছেন।’’ ক্লাসশুদ্ধ ছাত্রছাত্রীকে অবাক করে মিটিমিটি হাসতে হাসতে ওসি ফইম উদ্দীন মার্কার-ডাস্টার হাতে সোজা গেলন হোয়াটবোর্ডের কাছে। বোর্ডের ওপরে লিখলেন নিজের পরিচিতি ও সৈয়দপুর থানার মোবাইল নম্বর। বললেন, ‘‘এই নম্বরটি তোমরা নিজেদের কাছে রেখে দিও। কোনও রকম বিপদ হলে, কিংবা মেয়েদের রাস্তা-ঘাটে কেউ উত্যক্ত করলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করবে।’’
ক্লাসে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা এ বার যেন অনেকটাই সহজ হয়েছে। তাঁদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে জানতে চাইল, ‘‘স্যার, গ্রামের কারও যদি আঠারোর আগে বিয়ে হয় তাহলে কি এই নম্বরে ফোন করতে পারব?’’ ওসি ফইম উদ্দীন সহাস্য উত্তর, ‘‘অবশ্যই পারবে। ফোন করতে অসুবিধা হলে এসএমএসও পাঠাতে পার। প্রয়োজনে থানার মহিলা পুলিশের সঙ্গেও কথা বলতে পারবে। কোনও সঙ্কোচ বা ভয় করবে না তোমরা।’
এরপর প্রায় ঘণ্টা দু’য়েকের ক্লাসে উঠে আসে মাদকাসক্তি, নাবালিকার বিয়ের প্রতিরোধ, মোবাইলফোনে আসক্তির কুফল, নারী নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি কিংবা যৌন হেনস্থা সমস্যার মতো অনেক বিষয়। এ সময় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও মূল্যবোধ সম্পর্কেও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন তিনি। ছাত্রছাত্রীরাও তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন। দেখে মনে হচ্ছিল তিনি পেশায় একজন দক্ষ শিক্ষক।
ঘড়ির কাঁটা তিনটা ছুঁইছুঁই। স্কুলের জানালার বাইরে পড়ন্ত বিকেলে ছুটির হাতছানি। কিন্তু সে দিকে কারও যেন খেয়াল নেই। ওসি গল্পের মেজাজে ক্লাসে বলে চলেছেন।
ক্লাস শেষে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় কোনো ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয় কিনা সে বিষয়ে আবারও ছাত্রীদের কাছে জানতে চান ওসি। পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক যে কোনো সমস্যায় তার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
ওসি ফইম উদ্দীন সৈয়দপুরের আলো কে বলেন, বেশ কিছু থানাতে কাজ করার পরে আমার অভিজ্ঞতা—নাবালিকার বিয়ে, নারী নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি কিংবা যৌন হেনস্থা, মাদককের কারবার, অনলাইনে জুয়া খেলার মতো ঘটনা প্রায় ঘটে। কিন্তু সে সব বিষয়গুলি সবসময় থানা পর্যন্ত আসছে না। সমস্যাটা শুরু হয় সেখানেই। এতে যেমন অপরাধী দোষ করেও পার পেয়ে যায়। অন্যদিকে, নির্যাতিত কিংবা লাঞ্ছিত অনেকেই প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে ফেলে।
তিনি আরও জানান, এ জন্যই তিনি থানার কাজ সামলে সময় করে যোগাযোগ করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে। তারপর একদিন হাজির হয়ে যাচ্ছেন সটান ক্লাসরুমে। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ১৫ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিয়েছেন। তালিকায় রয়েছে আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ছাত্রছাত্রীরাও খুব খুশি হয়েছে ওসির ক্লাস করে। তারা বলে এতে আমাদের ভয় ও জড়তা কেটেছে’’।সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান জুয়েল বলেন, এটার দরকার ছিল। এমন উদ্যোগের ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্রমশ সচেতনতা সৃষ্টি হবে, কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে তারা। তাঁর কথায়, ‘‘এর সুফলও অবশ্যই পাওয়া যাবে।
প্রতিষ্ঠাতা : মোঃ মারুফ হোসেন লিয়ন
নিবার্হী সম্পাদক: মোঃ ফিরোজ আহমেদ
মোবাইলঃ ০১৪০৬০৬৮১৪৫ & ০১৮৩৩৭৭৫৫৯৯ ইমেইলঃ [email protected] অফিসঃ শহীদ স্মরণী ডাক বাংলো মোড় সংলগ্ন,সৈয়দপুর নীলফামারী
Copyright © 2025 Saidpurer Alo. All rights reserved.